ভারতে মুদ্রিত প্রথম পুস্তক

ভারতে মুদ্রিত প্রথম পুস্তক 


                                                   ছবি সৌজন্যঃ www.ittefaq.com

ভারতে প্রথম মুদ্রণযন্ত্রটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। অনেকে মনে করেন মোগল আমলে ছাপাখানার অস্তিত্ব ছিল। দ্বিতীয় শাহ আলম  নিজের উৎসাহে ও তত্ত্বাবধানে মুদ্রণকাজ সম্ভব করেছিলেণ। ইংরেজ বাহিনীর মেজর ইউলে ও লেফটেন্যান্ট ম্যাথুস আগ্রা দুর্গ ধকলের সময় একটি মুদ্রণযন্ত্র দেখতে পেয়েছিলেন। তাঁরা এটিকেই ভারতে মুদ্রণের প্রথম প্রচেষ্টা বলে মনে করেন।

বর্তমানে এই বিষয়ে গবেষকরা আলোকপাত করেছেন। ১৪৯৭ সালে পর্তুগীজদের ভারতে আগমন ঘটে। ভারতবর্ষে মুদ্রণশিল্পের ইতিহাসে পর্তুগীজরা অবিস্মরণীয় কীর্তির অধিকারী হতে পারতেন। তাঁরাই এদেশে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন ও দেশীয় ভাষায় বই রচনা করেন। কিন্তু ভারতস্ত পর্তুগীজ সরকারের দূরদৃষ্টির অভাব এবং পর্তুগীজ মিশনারীদের নৈতিক অধঃপতন তাঁদেরকে এই অক্ষয় কীর্তি থেকে বঞ্চিত করে। ভারতীয় মুদ্রণশিল্পের ইতিহাসে প্রাচীনতম উদ্যোক্তা রূপে পর্তুগীজদের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ কোরা হলেও এই শিল্পের প্রসারে তাঁদের কোনো অবদান না থাকায় তাঁদের কীর্তি শুধুমাত্র নাম উল্লেখেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।  

ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে খ্রিষ্টধর্মান্তরিত ভারতীয়দের খ্রিষ্টীয় নীতিশিক্ষা দেওয়ার জন্য গোয়ায় “Casa De Santa Fe” ( House of the Holy Faith) নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। পাদ্রী জোয়ানেশ দ্য বেইর ( Father Joannes de Beire) এর সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৫৪৫ সালে রোমের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠিতে লেখেন “ এই প্রতিষ্ঠানে নয়টি ভিন্ন ভাষাভাষীর জাতীর ষাটজন ছাত্র পড়িতেছে। ছাত্রেরা নিজেদের ভাষায় লিখিতে ও পড়িতে পারে। উপযুক্ত শিক্ষক ও গ্রন্থের অভাবে তাহাদের শিক্ষা হইতেছে না। আপনি মুদ্রণের উপযুক্ত মনে করিলে বিবেচনা করিলে খ্রিষ্টীয় ধর্মনীতি দেশীয় ভাষায় প্রকাশ সম্ভব।“

এরপরেই ভারতে মুদ্রণকাজ প্রতিষ্ঠার প্রবর্তন হয় বলে ধারণা করা হয়।ভারতবর্ষে সর্ব প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা হয় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে গোয়ায় কয়েকজন পর্তুগিজ জেসুইট পাদ্রীর আনুকূল্যে। একটি জাহাজে করে ছাপাখানাটিকে পর্তুগাল থেকে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে বর্তমান ইথিওপিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। মাঝপথে গোয়াতে বিশ্রামের জন্য জাহাজটি দাঁড়ায়। তারপর নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে আবিসিনিয়াতে না গিয়ে সেই ছাপাখানা গোয়াতেই প্রতিষ্ঠিত হয়। জন দা বুসামেন্ট নামক এক স্পেনীয় ধর্মযাজক ও মুদ্রাকর এই ছাপাখানা থেকে Concluss নামে একটি পর্তুগিজ ভাষায় রচিত ও রোমান অক্ষরে মুদ্রিত ধর্মপ্রচারমূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এটিই ভারতবর্ষে মুদ্রিত প্রথম বই। এরপর সেই ছাপাখানায়  আরো বেশকিছু গ্রন্থ ছাপা হয়। কিন্তু সবই ওই পর্তুগিজ ভাষায় ও রোমান হরফে।

          Doctrina Christam - Kirisithiyaani Vanakkam.  (ছবি সৌজন্যঃ উইকিপিডিয়া) 


ভারতীয় ভাষায় ছাপা প্রথম গ্রন্থটি আসতে সময় লেগেছিল আরো ২২ বছর! ১৫৭৮ খ্রিস্টাব্দে কেরালার কুইলন থেকে Doutrina Christam  নামক একটি পর্তুগিজ বইয়ের অনুবাদ গ্রন্থ Christya Vannakanam প্রকাশিত হয়।বইটি মালাবার ভাষায় অনুবাদিত হয়। সেই যুগে পর্তুগীজরা মালাবার বলতে তামিল ও মালায়ালাম উভয় ভাষাকেই বোঝাতেন।   এটিই ভারতীয় ভাষায় ও ভারতীয় হরফে মুদ্রিত প্রথম গ্রন্থ। আর এই গ্রন্থ নির্মাণের জন্য তামিল মুদ্রাক্ষরগুলো তৈরির মাধ্যমে যিনি ভারতীয় মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে পথিকৃত্ হয়ে থাকলেন তিনি একজন জেসুইট পাদ্রী, নাম জোহানেস গনজালভেস । মনে রাখার বিষয় হল  সেই সময়ের সমস্ত বই রোমান হরফে মুদ্রিত হত। ফাদার জোহানেস গনজালভেস সর্বপ্রথম তামিল অক্ষরে মুদ্রণের অক্ষর প্রকাশ করে প্রথম ভারতীয় ভাষার বই প্রকাশে অবদান রেখে যান। প্রথম তামিল ভাষায় মুদ্রিত বইটি হল “ ফ্লস স্যাঙ্কটোরাম” ( Flos Sanctorum) । এটিই দেশীয় ভাষায় মুদ্রিত প্রথম বই। এরপর ক্রমান্বয়ে মালায়াম, কন্নড় সহ বিভিন্ন ভাষায় বই মুদ্রিত হয়। ক্রমে এই প্রচেষ্টা দক্ষিণ ভারত থেকে পূর্ব ভারতে ছড়িয়ে পরে।   


ভালো থাকুন। পড়তে থাকুন।  🍀


তথ্যসুত্রঃ shodhganga.inflibnet.ac.in

বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস - সজনীকান্ত দাস 

0 Comments

আপনার বক্তব্য