বিভিন্ন বয়সের শিশুর আহার

 

বিভিন্ন বয়সে শিশুর খাদ্য তালিকা

জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য মায়ের দুধই যথেষ্ট। এই সময়কালের মধ্যে শিশুকে অন্য কোনো খাবার দেওয়া উচিত নয়।ছয় মাসের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে বাড়তি খাবার দিতে হবে। যদিও ছয় মাসের পর মায়ের বুকে দুধের পরিমাণ কমে যায় না। তবে এ সময়ে শিশুর বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হয়। তাই শিশুকে অন্যান্য খাবার দিতে হয়। শিশু অন্যান্য খাবারের সঙ্গে দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খেতে পারে।

জন্ম থেকে ছয় মাস

— জন্মের পরপরই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে মায়ের দুধ দিতে হবে।

— শিশু যতবার কাঁদবে, ততবার তাকে মায়ের দুধ খেতে দিতে হবে।সাধারণত ছয়মাস অবধি ২ ঘণ্টা পরপর শিশুর খাবারের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ২ ঘণ্টা পরপর স্তনদান করা আবশ্যক।

— দুধ দেওয়ার আগে প্রতিবার ভালো করে স্তনবৃন্ত পরিষ্কার করে শিশুর খাওয়াতে হবে ।

— বুকে পর্যাপ্ত দুধ না এলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিকারী ওষুধ সেবন করলে উপকার পাওয়া যাবে। তাতেও কাজ না হলে কিংবা কোনো কারণে শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া সম্ভব না হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো বাজারজাত ভালো কোম্পানির দুধের সাহায্য নিতে হবে।

ছয় মাস থেকে দুই বছর

— শিশুকে দিনে সাত - আটবার খাওয়াতে হবে। সাধারণত সকাল ৬টায়, সকাল ৮ টায় , সকাল ১০টায়,দুপুর ১ টায়, বিকাল ৪ টায় ,সন্ধ্যা ৭ টায় ও রাত ৯টা বা ১০টায় খাওয়াবেন। প্রতিবারে শিশু পাঁচ থেকে আট আউন্স খাবে।

— সকাল ৬টায় দুধ। বুকের দুধই এই সময় শ্রেষ্ঠ। যদি টা না হয় তাহলে এই সময় দুধে অল্প পরিমানে বাড়িতে বানানো সেরেল্যাক বা পিডিয়াসিওর ধরনের বেবী ফুড মিশিয়ে খাওয়ানো ভালো।

— সকাল ৮টায় ডিমের কুসুম , পাতলা সুজি বা ফল খাওয়ানো যাবে।

— ১০ টায় ফলের রস দেওয়াই ভালো।

— দুপুর ১টায় ভাত,ডাল, মাছ, শাকসবজি।

— বিকাল ৪ টায় দুধ ।

—সন্ধ্যা ৭ টায় সুজির পায়েস, ঘরে বানানো কেক বা বিস্কুট, বা অল্প সেরেল্যাক খাওয়ানো ভালো।

— রাত ৯-১০টায় রুটির পাতলা অংশ দুধে বা ডালে ভিজিয়ে অল্প আলু, গাজর প্রভৃতি সব্জী মিশিয়ে খাওয়ানো উচিত।

  • শাকসবজির মধ্যে শিশু যেসব শাকসবজি খাবে তা হলো :
    • গাজর,মিষ্টি আলু, বিট, বিন, কাঁচা পেঁপে, কড়াইশুঁটি, আলু, টমেটো, শিম, বরবটি, লাউ, ঝিঙে, পটোল, পালংশাক, লেটুস ইত্যাদি।
  • শিশুকে যেসব ফলমূল খাওয়ানো যাবে তা হলোঃ
    • কলা, কমলা, মুসম্বী, পাকা পেঁপে, আপেল, আঙুর, আম ইত্যাদি।

দুই বছর থেকে পাঁচ বছর

— দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা বড়দের কিছু খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালোরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কোন শিশুর কত ক্যালোরি পুষ্টি প্রয়োজন তা জেনে নেওয়া উচিত।

—সকাল ৬ টায়ঃ দুধ , সাথে সেরেল্যাক, পিডিয়াসিওর বা অন্য কোনও পরিপুরক ( supplementary food) পুষ্টিকর খাবার মিশিয়ে দিতে হবে।

— সকাল ৯টা : ডিম সেদ্ধ, রুটি, হালুয়া, ডাল সেদ্ধ ,অল্প ফল বা ফলের রস।

— দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, মাংস* , ডাল, শাকসবজি।

— বিকেল ৫টা : দুধ, বিস্কুট, সুজি, চিড়ে, মুড়ি, ঘরে বানানো কেক প্রভৃতি ।

—সন্ধ্যা ৭ টাঃ দুধ বা মাংসের পাতলা স্ট্যু বা সব্জীর স্যুপ।

—রাত ৯-১০টা : ভাত বা রুটি, সব্জী, ডাল প্রভৃতি।

কিছু বিশেষভাবে নজরে রাখার বিষয়ঃ

*সময় বুঝে ও শিশুর প্রয়োজন বুঝে মায়ের দুধ ২ বছর অবধি অবশ্যই দিতে হবে।

**মাংস দিতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে। মাংসের মধ্যে এই বয়সের শিশুকে মুরগির মাংস সপ্তাহে ২/৩ দিন বেশি দেওয়া উচিত না। মশলা ছাড়া অল্প আদা বাটা, মাখন ও নুন, হলুদ দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করে দিতে হবে। নাহলে হজমে অসুবিধা হবে।

*** সারাদিনে বারবার শিশুকে জল খাওয়ানোর কথা ভুললে চলবে না। শুধু জল খেতে অনেক বাচ্চার অনীহা থাকে। সেক্ষেত্রে অল্প মধু বা মিছরি মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে। চিনি একেবারেই বর্জনীয়।নুন ও যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা উচিত।

ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।  🍀

0 Comments

আপনার বক্তব্য