জীবনকে সুন্দর করে তোলার কিছু উপায়

জীবনকে সুন্দর করে তোলার কিছু উপায় 

সুন্দর জীবন আমাদের সবার কাম্য। কিন্তু জীবনকে সুন্দর করে তুলতে আমাদের ঠিক কি করা উচিত সে বিষয়ে আমরা অনেকেই মনস্থির করে উঠতে পারিনা। আজ সুন্দর জীবন পাওয়ার জন্য  যে ছোট ছোট যে কাজগুলো করা উচিত সেই বিষয়ে বলি। 

  • রোজ ভোরে বাড়ির সবার ঘুম ভাঙার খানিকটা আগে নিজে উঠে পড়ুন। এই সময়টা সম্পূর্ণ ভাবে নিজে দিন। শুধু নিজেকে নিয়ে থাকুন — "আমার সাথে আমি" । এই বিষয়ে স্বামীজির একটি বাণী আমি খুব মানি।
" সারাদিনে একবার অন্তত নিজের সাথে কথা বলা উচিত।নাহলে তুমি একজন অসাধারণ মানুষের সাথে দেখা করার সুযোগ হারাতে পারো।" 
  • নিজের জন্য এক কাপ চা বা কফি করে নিন এই সময়। সারাদিন কি কি কাজ করবেন তার একটা মোটামুটি খসড়া করে নিন মনে মনে । এতে সারাদিনের কাজ সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করতে অসুবিধা হবে না। নিজের পছন্দের কাজগুলোর জন্যও সময় বেরিয়ে আসবে।
  • সারাদিনের মধ্যে খুব সামান্য একটু সময় অন্তত ১৫ মিনিট প্রকৃতির সাথে কাটান।২০১০ সালে Journal of Environmental Psychology তে প্রকাশিত এক গবেষনায় দেখা দেখা প্রতিদিন যাঁরা অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট প্রকৃতির সাথে কাটান তাঁরা প্রাণশক্তিতে ভরপুর হন।এমন কি কাজের ফাঁকে কয়েক মুহুর্তের এক টুকরো প্রকৃতির ছোঁয়া — যেমন ঘাসে পা ফেলে হাঁটা বা খোলা আকাশের দিকে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে থাকা বা জানলা খুলে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া ও মনের বিকাশ ঘটায়। মন ও শরীরকে তাজা রাখে। এই সময় ফোনবিচ্ছিন্ন থাকবেন।
  • সারা সপ্তাহে একদিন অন্তত সামাজিক মেলামেশা করুন। পার্টি বা হৈ চৈ করার দরকার নেই। একজন কাছের বন্ধুর সাথেই না হয় দেখা করলেন। একটু গল্প আড্ডা প্রাণ খুলে হাসা। অসামাজিকতা ধীরে ধীরে মানসিক জড়তার জন্ম দেয়।
  • যাদের সাথে বহুদিন যোগাযোগ নেই তাদের সাথে একবার কথা বলুন। এক দুজন নতুন বন্ধু বানান। কে বলতে পারে আপনার সামনে হয়ত জীবনের কোনো আলোকিত পথ খুলে যেতে পারে।
  • সপ্তাহের ৬ দিন রুজি রোজগারের চেষ্টায় ব্যস্ততায় কেটে যায়। কিন্তু চেষ্টা করুন সপ্তম দিনটি শুধু পরিবারকে দিতে। প্রয়োজনে এই দিনটির জন্য আগে থেকে সময় ও কিভাবে কাটাবেন তার পরিকল্পনা করে রাখুন। পরিবারের মানসিক স্বাস্থ্য সুন্দর হলে আপনার জীবনও সুন্দর হতে বাধ্য।
  • সৃষ্টিশীল মানুষরা চেষ্টা করুন সকালের দিকে নিজেদের সৃষ্টিকারী কাজগুলো করার। গবেষণায় দেখা গেছে ঘুম ভাঙ্গার পর কর্টিসোল হরমোন শক্তির জোগান দিতে সাহায্য করে, ফলে মনসংযোগ বাড়ে। ফলে যে কোনো সৃষ্টি সুষ্ঠ ও সুন্দর হয়।
  • ধীরলয়ে ও নিম্ন স্বরে কথা বলার অভ্যাস করুন। এতে আপনার চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রকাশ পায়। গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্ব আপনার মত প্রকাশের গ্রহণযোগ্যতাকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। এতে আপনার মানসিক প্রশান্তি আসে।
  • ছুটির দিনগুলো যাতে আনন্দমুখর হয় তার চেষ্টা করুন। ছোট ছোট পাওয়া খুশিগুলো জীবনের কঠিন সময়কে সহজে পার করে দেবার শক্তি দেয়।
  • মাঝে মাঝে কাজের স্থানের রদবদল করুন। সম্ভব হলে স্থান পরিবর্তন করুন। সম্ভব না হলে বসার স্থানের কিছু জিনিস পত্রের পরিবর্তন করে নতুনত্ব আনুন।
  • দিনের শেষে গিয়ে যদি এরকম বোধ হয় যে আজ সারাদিন কিছুই কাজের কাজ করিনি তারমানে আপনি সারাদিন বিভ্রান্তিমুলক কাজে ব্যস্ত ছিলেন। নিজেকে সামলে নিন। ফোন, বন্ধুর আড্ডা, বিনোদন ইত্যাদি থেকে নিজেকে কিছু সময় দূরে রাখুন। নিজেকে শান্ত করুন, গভীর নিশ্বাস নিন, মনসংযোগ করুন। ভেবে ঠিক করুন অতি প্রযোজনীয় কাজ কোনটি। ক্রম তৈরি করুন। এক এক করে করতে শুরু করুন। সব যে শেষ হয়েই যাবে তা নয়। কিন্তু শুরু করে দিন — করতে থাকুন — ঠিক শেষ হবে।
  • সুষম ও পরিমিত আহার গ্রহণ করুন। খাদ্য তালিকায় তাজা সব্জি, ফলের পরিমান বেশী রাখুন। সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমান জল খান। শরীরকে গ্লানিমুক্ত রাখতে জলে ভুমিকা অসাধারন। নেশাজাত দ্রব্য পরিত্যাগ করাই ভাল।
  • জীবনের প্রতি দায়িত্বশীল ও আশাবাদী হন। যে কোনো বিষয়ের মধ্যে ভাল খোঁজার চেষ্টা করুন ।খারাপ গুলো লক্ষ্য করুন যাতে সাবধান হতে পারেন, কিন্তু সেগুলোকে নাদেখা করে উপেক্ষা করাই মঙ্গল।
  • প্রাণ খুলে শিশুর মত হাসুন। কারনের অপেক্ষায় থাকবেন না। আসে পাশের যে কোনো ছোট বড় ঘটনায় হাসি খুঁজে নিন। হাসিখুশি থাকা জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোর উন্মোচন ঘটায়।
  • মাঝে মাঝে ব্যস্তময় কর্মজীবন থেকে একটু লম্বা বিরতি নিন। এই সময় নিজের পছন্দের সেই কাজগুলো করুন যেগুলো ব্যস্ততা আপনাকে এতোদিন করতে বাধা দিয়েছে।
  • মাঝে মাঝে কিছু সামাজিক কাজে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করুন। মনে শান্তি পাবেন।
  • অন্যের কাজের প্রশংসা করতে শিখুন। নিন্দা করার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই জানবেন। আপনার ছোট্ট একটু প্রশংসা অন্যকে অনেকখানি ভাল কাজ করতে অনুপ্রেরনা দেয়। অপরকে খুশি করার মত আনন্দের কাজ কমই আছে। অন্যের মুখে হাসি ফুটলে আপনিও হাসবেন।
  • কথা বলার থেকে কথা শোনায় বেশি মন দিন। একটি অর্থবহ ও পরিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে গেলে আগে একজন ভাল শ্রোতা হওয়া দরকার। যদি অন্যের আস্থা অর্জন করতে চান তাহলে বিনা বাধায় অপর পক্ষের কথা মন দিয়ে শুনুন। তবেই তাঁর পরিস্থিতির সাথে একাত্ম হতে পারবেন। এতে সম্পর্ক দৃঢ় হবে।
  • নতুন প্রযুক্তির খোঁজ রাখুন। নিজেকে তার উপযুক্ত করে তুলুন। জীবনের অনেক সমস্যার সহজ সমাধানের চাবিকাঠি পেয়ে যাবেন।
  • গান শুনুন, বই পড়ুন। নিজের দৈনন্দিন জীবনের রোজনামচা লিখুন। ভারাক্রান্ত মন হাল্কা হয়ে যায়।
  • আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখুন। আয়ের তুলনায় ব্যয় যেন অবশ্যই কম হয়। সঞ্চয়ের দিকে মনযোগী হওয়া একান্তই দরকার।
  • কোনোকিছুর জন্য নিজের মতাদর্শের জলাঞ্জলী দেবেন না। "না" বলতে শিখুন। নিজের মতের বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করবেন না। তাতে আখেরে আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট হবে। নিজের সীমার বাইরে গিয়েও কিছু করবেন না। আপনি যা আপনি তাই থাকুন।
  • যোগা - প্রানায়ামের অভ্যাস করুন। এতে সুস্থ ও সুন্দর শরীর ও মনের অধিকারি হওয়া যায়। সুস্থ- সুন্দর শরীর ও মন সুন্দর জীবনের প্রতিফলন ঘটায়।

চিত্র সৌজন্যঃ গুগল 

0 Comments

আপনার বক্তব্য