মন ভালো রাখার উপায়




অতিমারির দুর্যোগে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় প্রত্যেকেই অল্প বিস্তর অবসাদ ও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। দীর্ঘদিন গৃহবন্দী জীবনে দমবন্ধ পরিস্থিতি আমাদের মন ভারাক্রান্ত করে তুলছে। মানসিক অবসাদ শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। মন ভালো রাখার জন্য আমাদের তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। তাহলেই আমরা এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা খুব সহজেই করতে পারব।

 
  • প্রাণ খুলে শিশুর মত হাসুন। হাসি সব অসুখ সারিয়ে দেয়। খুব কষ্টের মধ্যেও যদি হাসা যায় মন ভালো হবেই।
  • গলা ছেড়ে গান করুন। সুরেলা বেসুরো বেতালা কিচ্ছু নজর দেওয়ার দরকার নেই।
  • বিশেষজ্ঞরা বলেন নাচের মত মন ভালো রাখার ওষুধ আর কিছু হয়না। মাঝে মাঝে একটু আধটু নেচে নেবেন। একার মনে কিছুক্ষণ পাগলামো করা ভালো। মন উৎফুল্ল থাকে।
  • নিজের শখ- ভালোলাগা - পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে।
  • প্রত্যয়ী হন। আপনিও সব করতে পারেন। দরকার শুধু একটু অধ্যবসায় ও সৎ চেষ্টার।নিজের ওপর ভরসা ও বিশ্বাস দুই-ই রাখুন।
  • স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। শরীর ভালো তো মন ভালো।
  • কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার ক্ষমতা ও মানসিকতা রাখতে হবে। খুব ছোট্ট উপকারের জন্যও কৃতজ্ঞতা জানান।
  • অন্যের জন্য খুব সামান্য হলেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। কিন্তু নিজের স্বার্থহানী না ঘটিয়ে। অন্যের ভালো করলে মনে এক ধরনের প্রশান্তি আসে।
  • অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা মনেও আনবেন না।কথায় আছে অন্যের জন্য খুঁড়ে রাখা কুয়োতে নিজেকেই পড়তে হয়।
  • সব কিছু নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করবেন না। সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রনাধীন হয়না, সম্ভব না। কিছু জিনিস ছেড়ে দিতে হয়। সব কিছু নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী করার চেষ্টা করলে নিজেদের মানসিক অশান্তিই শুধু বৃদ্ধি পায়। যেটুকু নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব সেইটুকুতেই মনঃসংযোগ করা ভালো।
  • নিজের দোষ গুন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা উচিত। যে কোনও ঘটনায় আগে নিজেকে বিশ্লেষণ করলে ভালো। যেকোনও বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে পুরো বিষয়টিকে ভালো করে ভেবে দেখুন। হয়তো ঘটনার তীব্রতা বেশি নয়। অকারনে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দিলে শেষে মনঃকষ্টে আপনাকেই ভুগতে হবে।
  • মাঝেমধ্যে দৈনন্দিন নিয়ম থেক ছুটি নিন। একঘেয়ে জীবন মনঃকষ্টের অন্যতম কারন। কিছু সময় নিয়ম ভাঙ্গার মজাই আলাদা হয়।
  • কখনও কখনও ছোটখাটো কেনা কাটা করুন। কেনার কিছু না থাকলে window shopping করুন। তাতেও মন ভালো হয়ে যায়।
  • সামাজিক মাধ্যম একটি মিথ্যার জগৎ। তাকে সত্যি ভেবে নিজের জীবনকে তার সাথে জড়িয়ে জটিল না করারই উচিত। সামাজিক মাধ্যম থেকে দুরে থাকুন। থাকলেও সহজ ভাবে নিন। অন্যের সাথে তুলনা করে মাথা খারাপ করবেন না।
  • নিজের পছন্দের ভালোলাগার ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান। যখনই একটু সময় পাবেন চেষ্টা করুন তাঁদের সঙ্গ দিতে বা সঙ্গে থাকতে।
  • প্রত্যাখ্যান মানতে শিখুন। জীবনে হার-জিত থাকবেই। হেরে যাওয়াকে নিয়ে জীবন বলে ভেবে হা-হুতাশ করে সময় নষ্ট না করে আবার নতুন উদ্দ্যমে শুরু করুন। এগিয়ে যাওয়ার নাম জীবন। বাধা তো আসবেই।
  • বর্তমানে প্রেম একটি অত্যন্ত আলোচনার বিষয় হয়ে গেছে।প্রেমে প্রত্যখ্যান যেন জীবনের বিশাল এক না পাওয়া ব্যাপার। প্রেম না আসা বা বিচ্ছেদ যেন বিশাল এক ক্ষতি। দয়া করে প্রেমকে এত গুরুত্ব না দিলেও হবে। যদি ভালোবাসার মানুষের আসার হয় আসবে, থাকার হয় তো সারা জীবন থাকবে, নাহলে চলে যেতে দিন, তপস্যা করে আনার চেষ্টাও করার দরকার নেই। না হলে ভেঙ্গে পড়ারও দরকার নেই। যদি প্রেমে পড়েন তাহলে সৎ থাকুন, সম্পর্ককে দাম দিন, সময় দিন, গুরুত্ব দিন। ভালো থাকবেন।
  • সবশেষে বলব - মন থাকা মানেই মনঃকষ্ট হওয়া। বলা হয় দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা ব্যথা বোধ একমাত্র মৃতদের থাকে না। অর্থাৎ জীবনের আর এক নাম যন্ত্রণা। তাই মনবেদনাকে সহজ ভাবে নিন। তীব্রতা বেশি হোক কম হোক, কষ্টকে কিকরে আনন্দে পরিবর্তন করা যায় তা খুঁজে বার করুন। আপনার আনন্দ আপনিই খুঁজে পেতে পারেন। বন্ধু বা বিশ্বস্ত মানুষকে কষ্টের কথা বিনা দ্বিধায় বলুন। প্রাণ খুলে কাঁদুন। কোনো প্রকারের ভয়কে পাত্তা দেবেন না। সব সমস্যারই সমাধান থাকে। শুধু একটু ধৈর্য ধরে তা খুঁজে নিতে হয়। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন। মানসিক অসুস্থতাও এক ধরনের অসুখ। লজ্জার কোনো কারণ নেই।সবার হতে পারে। প্রয়োজনে চিকিৎসা দরকার। শুধু নিজের মনে গুমরে কষ্ট বাড়িয়ে জীবন শেষ করার কথা একেবারেই মনে আনবেন না। দুটো কথা সব সময় মনে রাখবেন - এক আপনার একটা ভুল পদক্ষেপ আপনার প্রিয়জনদের জীবন নষ্ট করে দেবে। তাঁদের জীবনও শেষ হয়ে যাবে। দুই- আপনার থেকেও অনেক বড় সমস্যা নিয়ে বহু মানুষ প্রতিদিন জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাই আত্মহত্যা করা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। নিজের মনকে ভালো রাখার চাবিকাঠি আপনার হাতেই আছে। শুধু একটু নজর মেলে দেখার অবকাশ টুকুই চাই। 

0 Comments

আপনার বক্তব্য