নতুন জীবন

 

নতুন জীবন

লেখিকা - শ্বেতলীনা



কাল দীপ্রর নাইট শিফট ছিল।অন্যদিন রাতে অফিস থাকলে ভোর পাঁচটার মধ্যে ঘরে ঢুকে যায় দীপ্র। আজ প্রায় সকাল সাতটা বাজে। অন্যদিনের মতই বিয়াস ভোরে উঠে জলখাবার বানিয়ে অপেক্ষা করছে। প্রথমে ভেবেছিল হয়ত কাজে আটকে পড়েছে তাই দেরী। কিন্তু তাহলে একবার ফোন করে বলে দেয় দীপ্র। আজ ফোন আসেনি।

বিয়াস ঘর - বার করছে বারবার। ফোন করেছিল কয়েকবার। বন্ধ আসছে। এরকম হওয়ার কথা নয়। দীপ্র জানে অজানা অচেনা শহরে মাত্র দু'সপ্তাহের বিবাহিত জীবনে এই ধরণের ঘটনায় বিয়াস ভয় পেতে পারে। জেনেশুনে এরকম করেনা দীপ্র।

বেশ ভয় লাগতে শুরু করল এবার বিয়াসের। গলার কাছে কি যেন একটা দলা পাকিয়ে আসছে। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে সাতটার দিকে হাঁটছে ধীরে ধীরে। একবার ভাবল বিয়াস - বাড়িতে বাবাকে ফোন করবে কিনা। কিন্তু বাবা কি করবে? অযথা চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠবে।

আরও কয়েকবার বাইরে ঘরে যাতায়াত করল বিয়াস।দীপ্রর আলমারি খুঁজে অফিসের ফোন নম্বর বার করল। অফিসে ফোন করে খোঁজ নিতে দীপ্রর বস এসে কথা বললেন।জানালেন ঠিক সময়েই অফিস থেকে চলে গেছে দীপ্র। অফিস থেকে বাড়ি মাত্র দশ মিনিটের রাস্তা।

এবার ভয়টা চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল। জলভরা চোখ নিয়ে আশেপাশের বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো কার কাছে যাবে। চারিদিক ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। মন বলছে নিশ্চয়ই অঘটন কিছু ঘটেছে। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তগুলো যেন যুগের সমান লাগছে।

হঠাৎ চমকে উঠল। দূর থেকে একটা বাইক আসছে। কেউ একটা হাত নাড়ছে। তাড়াতাড়ি চোখ মুছে তাকালো বিয়াস। একজন অচেনা ছেলের বাইকের পিছনে বসে দীপ্র আসছে — হাত নাড়তে নাড়তে। চার তলার বারান্দা থেকে ঝুঁকে বিয়াস দেখলো ভালো করে দীপ্রকে। বাইক থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌড়াতে দৌড়াতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছে দীপ্র। মুখে হাসি উপচে পরছে।

বিয়াস দরজা খোলার অপেক্ষা শুধু। সামনে দাঁড়িয়ে দু'হাতে দু'কান ধরে দীপ্র।

"সরি! সরি! ভুল হয়ে গেছে রে। সত্যিই খুব অন্যায় করে ফেলেছি। ফোনটাও যে কখন বন্ধ হয়ে গেছে খেয়াল করিনি।তুই কাঁদছিলি?সরি ! " কান ধরেই ঘরে ঢুকে আসে।

বিয়াস তখনও হতভম্ব। আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করে " কি হয়েছিল? "

দীপ্র হাসতে হাসতে বলে " রাগিস না প্লিজ ! মানে কি বলত ।আমি তো আগে নাইট শিফট শেষ হলে জলখাবার খেয়েই বাড়ি ফিরতাম। তাই কয়েকজন মিলে অফিসের ক্যান্টিনে খেতে চলে গেছিলাম।ওখানেই ছিলাম। বস তোর ফোন পেয়ে আমায় খুঁজে বের করে যখন বললেন যে তুই ফোন করেছিলি, চিন্তায় আছিস খুব। তখন আমার মনে পড়ল যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। নাহলে ভুলেই গেছিলাম ।"

বিয়াস অবাক হবার শীর্ষ সীমায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে কোনোমতে জানতে চায় — " তুই ভুলে গেছিলি যে তোর বিয়ে হয়ে গেছে?"

দীপ্র হাসতে হাসতে বলে - "হ্যাঁ রে । ভুলেই গেছিলাম।আসলে অভ্যাস নেই তো।"

গত কয়েক ঘণ্টার ভয় আতঙ্ক ত্রাসের সাথে তুমুল রাগ এবার আছড়ে পরে। বিয়াস ডুকরে উঠে কাঁদতে শুরু করে।

"তুই ভুলে গেলি? ভুললি কি করে?বিয়ের কথা ভুলে গেলি? কি করে আমায় ভুললি? আবার হাসছিস ? "

ব্যতিব্যস্ত দীপ্র তখন মানভঞ্জনের উপায় খুঁজতে ব্যস্ত।


 চিত্র সৌজন্যঃ http://clipart-library.com/indian-wedding-line-art.html 

0 Comments

আপনার বক্তব্য