ফুচকা তৈরির প্রণালী

 ফুচকা 





আমার  প্রিয়তম খাবার হল কলকাতার "ফুচকা"।এই একটিমাত্র খাবার যা আমি কখনো না বলিনা। কলকাতার ফুচকা বললাম কারণ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ভ্রমণ করার সময় ফুচকা খেয়ে দেখেছি কলকাতার ফুচকার স্বাদই আলাদা। এই স্বাদ অন্য কোথাও পাইনি। স্থানভেদে এর নামও ভিন্ন-- গোলগাপ্পা, ফুলকি, টিক্কি, ফুচকা, গুপচুপ, বাতাসি, পাকাড়া, পানিপুরি, পাকোরি ইত্যাদি। ফুচকার ভেতরে দেওয়ার পুরেরও রকমভেদ আছে। আলুসেদ্ধর পুর, ঘুগনির পুর, আলু ঘুগনির পুর, এছাড়াও হরেকরকম। ঠিক তেমনভাবে ফুচকার সঙ্গী হয় কখনও তেঁতুল জল, আবার কখনও পুদিনার জল। এর পাশাপাশি দই ফুচকার নামও বিশেষভাবে উল্লেখ্য।

"ফুচকা" সৃষ্টির ইতিহাস জানতে যখন একটু খোঁজ খবর করলাম। তখন  অবাক হলাম জেনে যে এর আবিষ্কর্তা মহাভারতের দ্রৌপদী। কথিত আছে মহাভারতের সময়কাল। দ্রৌপদী তখন সদ্যবিবাহিতা। একদিন শাশুড়িমা কুন্তী যাচাই করতে চাইলেন যে অল্প কিছু উপকরণ দিয়ে তাঁর পুত্রবধূ দ্রৌপদী কতটা ভাল খাবার বানাতে পারেন। তাই তিনি একটু আলুর তরকারি ও ময়দামাখা দিয়ে দ্রৌপদীকে বললেন এমন কিছু খাবার বানাতে যা পঞ্চপাণ্ডবকে সমানভাবে তৃপ্ত করে। এটা হতে পারে যে কুন্তী চেয়েছিলেন স্বল্প উপকরণের মধ্যে বৌমার রন্ধনশিল্পের পরীক্ষা নিতে অথবা দেখতে চেয়েছিলেন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে কার প্রতি দ্রৌপদী পক্ষপাতিত্ব করেন। সেই ময়দামাখাকে সমানভাবে ভাগ করে ভেজে তুলে তার মধ্যে আলুর পুর দিয়ে দ্রৌপদী ফুচকা বা ফুলকা আবিষ্কার করে ফেললেন। বৌমার রন্ধন পারদর্শিতায় মুগ্ধ হয়ে কুন্তীর আশীর্বাদে সেদিনের সেই খাবারটি অমরত্ব লাভ করে।

অনেকেই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বাইরের রাস্তায় বিক্রি হওয়া ফুচকা খেতে চাননা।অনেকেই ভাবেন,' ইসস! যদি বাড়িতে বানাতে পারতাম। তাহলে আর বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হত না। '   

তাই আজ আমি বাড়িতে ফুচকা তৈরির প্রণালী জানালাম।খুবই সহজ আর সুস্বাদু। 

___________________________________________________________________________________________________________

ফুচকা তৈরির পদ্ধতি 

ফুচকা উপকরণঃ

·         সুজি – ২ কাপ

·         ময়দা – আধা কাপ।

·         জল – আধা কাপ

( বি.দ্র. ময়দা মাখার সময় নুন বা বেকিং পাউডার বা খাবার সোডা একেবারেই দেওয়া চলবে না।)

আলুর পুরের উপকরণঃ

·         আলু সেদ্ধ – ৫০০ গ্রাম

·         ঘুগনি মটর – ১০০ গ্রাম

·         ধনেপাতা – ২৫ গ্রাম  ( মিহি করে কুচোনো)

·         ভাজা মশলা – ২ চামচ

·         বিট নুন – আধা চামচ

·         লঙ্কাগুঁড়ো – আধা চামচ

·         কাঁচা লঙ্কা কুঁচি – এক চামচ


তেঁতুল জলের উপকরণঃ

·         পাকা তেঁতুলের ক্বাথ – এক কাপ

·         সয়া সস – ১ চামচ

·         বিটনুন – ২ চামচ

·         গন্ধরাজ লেবুর রস – ১৫ মিলি

·         ভাজা মশলা – ২ চামচ

·         লেবু পাতা – ৫/৬ টা

·         জল – ১ লিটার


পদ্ধতিঃ

·         আলুর পুরের সমস্ত উপকরণ একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।

·         তেঁতুলের জলের  সমস্ত উপকরণ আলাদা পাত্রে মিশিয়ে নিতে হবে।

·         ফুচকার জন্য ময়দা ও সুজিকে একসাথে অল্প অল্প জল মিশিয়ে শক্ত করে মাখতে হবে।

·         আধা ঘণ্টা ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। তারপর আবার ভালো করে মাখতে হবে।

·         সুজি মাখা মসৃণ মণ্ডে পরিণত হওয়া অবধি মাখতে হবে। আধা ঘণ্টা আবার ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।


·       এরপর লেচি কেটে বড় বড় রুটির আকারে বেলে, ছোট গলাকার আকৃতির কুকি কাটার দিয়ে ছোট ছোট আকৃতির ফুচকা কেটে নিতে হবে।

·         কেটে নেওয়া ফুচকাগুলো থালায় করে ৫/৭ মিনিট হাওয়ায় শুকিয়ে নিতে হবে।



·         কড়াইতে তেল ভালো করে গরম হলে একসাথে ৪-৫ টি ফুচকা ভাজতে হবে। দুই দিক ভালো করে লাল হওয়া অবধি ভেজে তুলে নিতে হবে।

·         প্রয়োজনে কৌটা বা পলিথিন ব্যাগের মধ্যে করে সপ্তাহ খানেক রাখা যায় ।



পরিবেশন পদ্ধতিঃ

ভাজা ফুচকা আঙ্গুলের  একটু চাপ দিয়ে ভেঙ্গে নিয়ে তারমধ্যে আলুর পুর ও তেঁতুলের জল দিয়ে খেতে হবে।  


ভালো থাকুন। স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। 🍀


তথ্যসুত্রঃ 

https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%9A%E0%A6%95%E0%A6%BE

চিত্রসুত্রঃ নিজস্ব 



0 Comments

আপনার বক্তব্য