তিনকড়ি দাসী - বঙ্গীয় নাট্যমঞ্চের বিস্মৃত এক নটীর কথা

তিনকড়ি দাসী - 

বঙ্গীয় নাট্যমঞ্চের বিস্মৃত এক নটীর কথা



বঙ্গ নাট্যজগতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বঙ্গীয় রঙ্গমঞ্চের ইতিহাস প্রায় একশো বছরের প্রাচীন। হাতিবাগান থেকে বিডনস্ট্রিট পর্যন্ত অঞ্চল নটীদের নুপুর নিক্কনে, মদ্যপ শ্রোতার 'বাহবা' ও সমবেত করতালির শব্দে মুখর হয়ে থাকত। পানের পিকে সর্বত্র রঙীন হয়ে থাকত। এই সমস্ত রমণীরা কলকাতার অলিগলিতে বাসা বেঁধে থাকতেন, এঁরা ছিলেন পুরুষের নর্মসহচরী। গ্রাম ও আধা শহর থেকে রুজি রোজগারের আশায় কলকাতায় আসা কিশোরীরা বেশিরভাগই শহরের অন্ধ কানাগলিতে হারিয়ে যেত, কামুক মাতাল বাবুদের কামনার হাটে বিক্রি হয়ে যেত। এদেরই মধ্যে কেউ কেউ বঙ্গীয় নাট্যমঞ্চে অভিনয় করার সুযোগ পান। প্রথমে নাট্যজগতের নারী চরিত্র গুলি পুরুষরাই মহিলার সজ্জায় সজ্জিত হয়ে নির্বাহ করতেন। সেই সময় কোনো ভদ্র পরিবারের মেয়েরা রঙ্গমঞ্চের অভিনেত্রী হবেন তা কল্পনাতীত ব্যাপার ছিল। সুতরাং রঙমঞ্চের নারী চরিত্রের জন্য এঁরাই একমাত্র সুযোগ পেতেন। সেই যুগের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য অভিনেত্রী হলেন — এলোকেশী, কিরণবালা, ক্ষেত্রবালা, গোলাপসুন্দরী, নীরদাসুন্দরী, বিনোদিনী, তারাসুন্দরী, শশীমুখী, রেনুবালা, ইন্দুবালা প্রভৃতি । উপেন্দ্রকিশোর বিদ্যাভূষণের এই বিষয়ে নিজের লেখায় বলেছেন —

আমাদের দেশীয় অভিনেত্রীকূল পঙ্কিল সমাজ-হেয় বারবালাগণ হইতে সংগৃহিত হইলেও গুণ গরিমায় তাহারা বিদ্বৎ-সমাজের বরেণ্য । ললিতকলা মন্দিরে তাহাদের আসন নির্গুণ অভিজাত বংশোদ্ভবগণ হইতে অনেক উচ্চপদে।

তিনকড়ি দাসী

বাংলা রঙ্গমঞ্চের বিখ্যাত রঙ্গনায়িকা নটী বিনোদিনী ১৮৮৬ সালে আকস্মিকভাবে বঙ্গরঙ্গ মঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন । এর ঠিক পরেই রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ ঘটল তিনকড়ি দাসীর। দশ - বারো বছর বয়সে 'গ্রেট ন্যাশনাল' থিয়েটারে মা ও মায়ের কিছু বন্ধুবর্গের সঙ্গে 'রাবনবধ' নাটক দেখতে এসে নটী বিনোদিনীর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিলেন তিনকড়ি। নাটকের অন্য অভিনেত্রী কাদম্বিনী, ক্ষেত্রমণি, গঙ্গামণিদের অভিনয় ও ভাল লেগেছিল। এঁদের সমস্ত কালিমা মাখা তুচ্ছতা যেন মঞ্চে এসে ধুয়ে মুছে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। মানুষজন এঁদের নিয়ে আলোচনা করছেন। তারিফ করছেন। জীবনের একটা পথ রয়েছে মঞ্চের ঐ মায়াবী আলোর জগতে।তখন থেকেই মঞ্চে প্রবেশের পথ খোঁজার শুরু। এই নাটকের দু-তিন খানি গান তিনি মুখস্থ করে ফেলেছিলেন তখনি। পরদিন সকালেই মা এর কাছে অনুরোধ পেশ করলেন —" মা, আমি থিয়েটার কর্বো।" বালিকা তিনকড়ির মা কিন্তু মেয়ের প্রস্তাবকে হেসে উড়িয়ে দেননি। তাঁদের সমাজ থেকেই তো সুকুমারী, বিনোদিনীর মত অভিনেত্রীরা উঠে এসেছিলেন। সমাজে সন্মান প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুতরাং হয়তো থিয়েটারই তাঁর কন্যার জীবনে আলোর পথের সন্ধান দেবে। তাঁর জীবনটা হয়তো কালিমামুক্ত হয়ে সুখের হবে। তাই শুরু হল স্বপ্ন সফল করার জন্য রাস্তা খোঁজা।

অবশেষে সুযোগ এলো। তিনকড়িদের বাড়ির কাছেই স্টার থিয়েটারের এক অভিনেতা থাকতেন। তাঁরই হাত ধরে তিনকড়ির স্টারে প্রবেশ।প্রথমেই অভিনয়ের সুযোগ পেলেন না।রিহার্সাল দেখার সুযোগ জুটল। রিহার্সাল দেখে মঞ্চে প্রবেশ, মঞ্চে এসে দাঁড়ান, চলা-ফেরা নকল করা, কিভাবে স্বর নিক্ষেপ করতে হয় তার কৌশল আয়ত্ত করা — এই তখন তাঁর একমাত্র কাজ ছিল। এরপর ক্ষেত্রমণির চেষ্টায় "বিল্বমঙ্গল" নাটকে সুযোগ পেলেন। কিন্তু কোনো সংলাপ ছিল না। রাধা -কৃষ্ণের লীলাদৃশ্যে কৃষ্ণ সঙ্গিনীরূপে শুধু চামর দোলাতে হত। যেদিন প্রথম চামর দোলানোর অভিনয় করার জন্য মঞ্চে প্রবেশের অধিকার পেলেন সেদিন তাঁর মন আনন্দে ভরে উঠেছিল। তখন কিন্তু কেউ ভাবেননি যে এই দাসীই একদিন বঙ্গনাট্যমঞ্চের "বড়বিবি" হবেন।এরপরেও বেশ কয়েকটি নাটকে সংলাপহীন দাসীর ভূমিকায় অভিনয়ের পর একদিন "রূপ-সনাতন" নাটকের অভিনয়ে একজন সখীর অনুপস্থিতিতে গান গাইবার সুযোগ এল। গানটি ছিল — "দেখল ওই রাইয়ের সন্নিবেশিত বেণী / কাল ভূজঙ্গিণী"। গানটি তিনকড়ি এমন ভাব ভঙ্গী করে গেয়েছিলেন যে দর্শক বারবার হাততালি দিয়ে বালিকা অভিনেত্রীকে অভিনন্দিত করেছিল। স্টার থিয়েটার কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে এক টাকা উপহার দিলেন সন্দেশ খাওয়ার জন্য। এটিই ছিল তাঁর প্রথম পুরস্কার। উপেন্দ্রকিশোর বিদ্যাভূষণ লিখেছেন —

শ্রীমতি তিনকড়ি তাহার সেই প্রথম পুরস্কারের টাকাটি খরচ না করিয়া বহু যত্নে তুলিয়া রাখিয়াছিল এবং সেই টাকাটি না কি তাহার শেষদিন পর্যন্ত তোলাই ছিল। কতবার কত বড় বড় অভাব তাহার মাথার উপর দিয়া গিয়াছে, তথাপি সেই টাকাটি খরচ করে নাই।

যাইহোক । এই একটিমাত্র গান তাঁর মঞ্চে অভিনয়ের চাবিকাঠি হয়ে উঠল। কিন্তু তাও তিনকড়িকে স্টার ছেড়ে দিতে হল। ধনকুবের গোপাললাল শীল নতুন থিয়েটার খোলার জন্য বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটার ও তৎসংলগ্ন জমি কিনে নিলেন। সেখানে গড়ে উঠল 'এমারেল্ড থিয়েটার'।স্টার থিয়েটারের মালিকরা নতুন স্টার থিয়েটার গড়তে হাতিবাগানে জমি ক্রয় করলেন। কিন্তু যতদিন না নতুন থিয়েটার নির্মান হচ্ছে ততদিন কর্তৃপক্ষ চুপ করে বসে না থেকে ঢাকার ইস্টবেঙ্গল মঞ্চে কিছুদিন অভিনয় করবেন, ইতিমধ্যে নতুন থিয়েটার গড়া হলে কলকাতায় ফিরবেন — এরকমই পরিকল্পনা ছিল তাঁদের।তিনকড়িও তাদের সাথে ঢাকা যাবেন মনস্থির করলেন। কিন্তু তাঁর মা তাঁকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন না। মায়ের বিনা অনুমতিতে তিনকড়ির ঢাকা যাওয়ার বাসনা অপূর্ণ রয়ে গেল। যথাসময়ে স্টার থিয়েটার সদলবলে ঢাকায় চলে গেল। এর সাথে সাথে স্টারের সাথে তিনকড়ির সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হল। জনশ্রুতি আছে ঢাকায় চলে যাওয়ার পর তিনকড়ি তিনদিন অনাহারে পড়ে থেকে অবিরাম কেঁদেছিলেন।

মঞ্চের নেশায় আচ্ছন্ন তিনকড়ি এখানে-সেখানে অভিনয়ের সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে বীণা থিয়েটারে চলে এলেন। থিয়েটারের মালিক রাজকৃষ্ণ রায় ৩৮ মেছুয়াবাজার স্ট্রিটে বড় করে বীণা থিয়েটার খুলেছিলেন। স্ত্রী-চরিত্রে পুরুষরাই অভিনয় করতেন। কিন্তু চলেনি। দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে ভাড়াও দিয়েছিলেন কিন্তু সেখানেও লাভ করতে না পেরে অগত্যা নিজেই আবার ফিরে আসেন। এবং বাস্তবের দাবী স্বীকার করে রাজকৃষ্ণ ঠিক করলেন অভিনেত্রীদের দ্বারাই নারী-চরিত্রে অভিনয় করাবেন। নতুন করে বীণার উদ্বোধন করার পরিকল্পনা করছেন — ঠিক এই মুহূর্তেই তিনকড়ি এলেন রাজকৃষ্ণের কাছে। তিনকড়ির গানের গলা, অনিন্দ্য সুন্দর রূপ, কথাবার্তা, আত্মবিশ্বাস, থিয়েটার করার আগ্রহ দেখে ভাল লাগল রাজকৃষ্ণের। কুড়ি টাকা বেতনে বীণা থিয়েটারে নিযুক্ত হলেন তিনকড়ি। মঞ্চস্থ হল " মীরাবাঈ" । নামভূমিকায় সুযোগ পেলেন। মীরাবাঈ সুখ্যাতি অর্জন অর্জন করল। গান, অভিনয় আর সৌন্দর্য্যের ছটা — ত্রিবেণীসঙ্গম। মহেন্দ্রলাল মুগ্ধ হয়ে গেলেন, তিনকড়িকে নিয়ে গেলেন এমারেল্ড থিয়েটারে ।

স্টার থিয়েটারের বাড়ি কিনে গোপাললাল শীল এমারেল্ড থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্টারের অনেক শিল্পীকেই টাকা দিয়ে ভাঙিয়ে নিযুক্ত করেছেন। তিনকড়িও চল্লিশ টাকায় নিযুক্ত হলেন। নন্দবিদায় নাটকে "বলরাম", বিদ্যাসুন্দরে "নাগরিকা", রাসলীলায় "বৃন্দা" -র ভূমিকায় অভিনয় করলেন বটে কিন্তু মীরাবাঈ এর তৃপ্তি পেলেন না। গোপাললাল শীলের সাথে সম্পর্ক চোকানোর রাস্তা খুঁজছেন। ওদিকে নাটকে বিশেষ লাভ করতে না পেরে গোপাললাল ও থিয়েটারে ছাঁটাই করতে শুরু করেছেন। তাই একদিন মহেন্দ্রলালকে ডেকে থিয়েটারের আর্থিক দূরাবস্থার কথা জানিয়ে তিনকড়ির বেতন চল্লিশ থেকে কমিয়ে পঁচিশ করার কথা জানালেন। তিনকড়ি একথা জানতে পারলেন। আত্মসম্মানে ঘা লাগল। সদর্পে এক টাকাও কম নেবেন না বলে জানালেন। এবং ফলস্বরূপ কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন।

১৮৮৯ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি গিরিশচন্দ্র এমারেল্ড ছেড়ে স্টারে এসে দেখলেন স্টার তখন অনেক স্বাবলম্বী। স্টার কর্তৃপক্ষ ও গিরিশচন্দ্রের শিষ্যদের সাথে তাঁর বিভিন্ন কারনে মন কষাকষি শুরু হয়েছিল।গিরিশ্চন্দ্রের দ্বিতীয়া পত্নী ও এক সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন কারনে বিভিন্ন লোকের সাথে মামলা মকদ্দমায় জর্জরিত। নিজের ও নিজের একমাত্র শিশুপুত্রও গুরুতর অসুস্থ। এই অবস্থায় স্টার গিরীশবাবুকে বরখাস্ত করল। কিন্তু সমস্ত শিল্পীরা এই অপমান সহ্য করলেন না। নীলমাধব চক্রবর্তী স্টারের প্রায় পনেরোজন অভিনেতা-অভিনেত্রী সমেত রাতারাতি স্টার ত্যাগ করলেন। বীণা রঙ্গমঞ্চ ভাড়া নিয়ে নীলমাধব চক্রবর্তী শুরু করলেন 'সিটি থিয়েটার'। এই সময় নীলমাধব চক্রবর্তী, প্রবোধচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ তিনকড়ির সিটি থিয়েটারে যোগদানের অনুরোধ করেন। তখন এমারেল্ড ছেড়ে তিনকড়ি বসেই ছিলেন এবং এমেরেল্ডের বেতনেই তিনি সিটি থিয়েটারে যোগ দিলেন। ১৮৯১ সালে অভিনয় করলেন চৈতন্যলীলায় 'ভক্তি', সরলাতে গদাধরচন্দ্রের 'মা', বিল্বমঙ্গলে বণিকপত্নী, তরুবালায় 'দামিনী', সধবার একাদশীতে 'কাঞ্চন', বিবাহ বিভ্রাট প্রহসনে 'ঝি' । তিন চার বছর ধরে থিয়েটারের বিভিন্ন ভুমিকা তাঁর অভিনয়ের অতৃপ্তিকে ঘোচাতে পারেনি। এই সময় তিনকড়িকে কালীকৃষ্ণ ঠাকুরের বাড়িতে দেখে মুগ্ধ হলেন স্বয়ং গিরিশচন্দ্র ঘোষ। মিনার্ভা তখন সদ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দায়িত্বে আছেন গিরীশবাবু। স্টার থেকে বহিষ্কৃত গিরিশচন্দ্রের নিজেকে প্রমাণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা মনে নিয়ে "ম্যাকবেথ" মঞ্চস্থ করবেন স্থির করেছেন। চাই একজন 'লেডি ম্যাকবেথ'। মিলে গেল। গিরিশচন্দ্র তিনকড়িকে মিনার্ভায় নিয়ে এলেন। তিনকড়ির নাট্যনদী সাগরে মিলিত হল।একদিকে কম বেতনের জন্য মায়ের চাপ যাতে তিনি তাঁদের প্রথাগত গণিকা-জীবনেই ফিরে যান । অপরদিকে থিয়েটারে চলাকালীন প্রতিযোগীতা -প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু সমস্ত বাধা কাটিয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। তিনকড়ির ধারনা ছিল তাঁর চেহারাটি রঙ্গালয়ের জন্য বেমানান। সাধারনের চেয়ে তিনি বেশ খানিকটা লম্বা ছিলেন। অন্য অভিনেত্রীরা তাঁকে 'তেঠেঙ্গে' বলে ঠাট্টা করতেন। ১৮৯১ সালের ১৭ই বা ১৮ই অক্টোবর কালীকৃষ্ণ ঠাকুরের বাড়িতে পূজা উপলক্ষ্যে তিনকড়ি গিরিশচন্দ্রের নজরে এলেন। তাঁকে দেখে নীলমাধবকে ডেকে বলেছিলেন — "তিনকড়ির রঙ্গালয়ের উপযোগী চেহারা আছে, গলাটিতে সব রকমের স্বর খেলা করে। কালে সে বড় অভিনেত্রী হবে।" কিন্তু তার চেহারা যে নায়িকা চরিত্রের পক্ষে, বিশেষ করে ট্র্যাজিক চরিত্রের উপযোগী তা গিরীশচন্দ্রের চোখে ধরা পড়েছিল। গিরীশচন্দ্রের মন্তব্য তিনকড়ির মনের সমস্ত দ্বিধাকে সম্পূর্ণরূপে ঘুচিয়ে দিল।

মিনার্ভাতে 'ম্যাকবেথ' নাট্যায়িত করার প্রস্তুতি চলছে। লেডি ম্যাকবেথের চরিত্রে বিখ্যাত অভিনেত্রী প্রমদাসুন্দরী অভিনয় করছেন। কিন্তু তাঁর অভিনয় কিছুতেই গিরীশবাবুর মনের মত হচ্ছে না। এই অবস্থায় এক দুপুরে তিনকড়ির কাছে নট-গুরুর কাছ থেকে ডাক এল। তিনকড়ির ভাষায় —

বাংলার নট-গুরু গিরীশচন্দ্র আমাকে ডাকিয়াছেন, ইহাই ভাবিতে আমার গর্বে সমস্ত প্রাণটা ভরিয়া গিয়াছিল।

সেদিন সন্ধ্যায় গাড়ি এলো তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। দুরুদুরু বক্ষে, ভিরু পদক্ষেপে তিনকড়ির মিনার্ভাতে প্রবেশ ঘটল। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর গিরীশবাবুর ঘরে ডাক পরলো। তিনকড়ির বর্ণনায় —

সেই কালীকৃষ্ণবাবুর বাটিতে যেদিন তাঁকে দেখিয়াছি, সেইদিন হইতেই মনে মনে তাঁহাকে গুরু বলিয়া পূজা করিতাম। আজ সেই গুরুর নিকট হইতে আমার ডাক আসিয়াছে, আমি তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছি। তখন আমার বুকের ভিতর কী হইতেছিল তাহা কেবল অন্তর্যামীই জানেন। থিয়েটারের পশ্চাদভাগে একটি চেয়ারে উপবিষ্ট ছিলেন। তাঁহার সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইলাম।তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইয়া আপনা হইতে আমার মাথাটা তাঁহার পায়ের উপর লুটাইয়া পড়িল। আমি ধীরে ধীরে যাইয়া তাঁহার পদধুলি গ্রহণ করিলাম। গিরীশবাবু অপর এক ব্যক্তির সহিত কথা কহিতেছিলেন। আমার দিকে ফিরিয়া বলিলেন,"হয়েছে থাক।ঐ খানে বস।"

সামান্য কথা। তারপর ত্রিশ টাকা বেতনে মিনার্ভায় বহাল করে নিলেন। তিনকড়ি একবারও বলতে পারলেন না যে সিটি থিয়েটারে তিনি চল্লিশ টাকা বেতন পেতেন। তিনকড়ির সাথে মিনার্ভার এক বছরের চুক্তি সাক্ষর হল।

এই সময় এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। "ম্যাকবেথ" নাটকে তিনকড়ির কোনও ভূমিকাই ছিল না। প্রতিদিন আসতেন, রিহার্সাল দেখতেন, বাড়ি ফিরে যেতেন। একদিন প্রমদাসুন্দরীর "লেডী ম্যাকবেথ" চরিত্রের অভিনয়ে তিতিবিরক্ত হয়ে গিরীশবাবু হঠাৎ নতুন অভিনেত্রী তিনকড়িকে ডাকলেন। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন তিনকড়ি। তাঁর প্রতীক্ষার অবসান হল। গিরীশবাবু পার্টটি তিনকড়ির হাতে দিয়ে তাঁকে বলতে বললেন। তিনকড়ি একদিন সময় চেয়ে নিলেন। বাড়ি ফিরে সারারাত এতদিন রিহার্সাল দেখে গিরীশবাবু কি চান ঠিক সেই ভাবে সম্পূর্ণ পার্ট কন্ঠস্থ করে ফেললেন। পরেরদিন গিরীশবাবুর নির্দেশে সেই পার্ট বলতে শুরু করলেন। থিয়েটারের সমস্ত লোক জড় হয়ে সেই রিহার্সালের সাক্ষী রইলেন। পার্ট শেষ হলে সকলেই একবাক্যে বললেন — " না, এ তৈরি হলে পার্ট প্রমদার চেয়ে অনেক ভাল করবে।" গিরীশ ঘোষের মুখরক্ষা হল।রিহার্সাল চলতে লাগল। তিনকড়ি গিরীশচন্দ্রের তথ্যাবধানে অভিনয়ের তালিম নিতে থাকলেন। শিক্ষক গিরীশচন্দ্র সম্বন্ধে তিনি বলেছেন —

গিরীশবাবুর মতো শিক্ষক পাইয়াছিলাম বলিয়া আজ আমি অভিনেত্রী। বঙ্গ-রঙ্গালয়ে আমি বহু অভিনেতা ও অভিনেত্রীর সহিত অভিনয় করিয়াছি ও করিতেছি, কিন্তু যথার্থ গুরু বলিবার উপযুক্ত লোক আমি গিরীশবাবু ভিন্ন আর কাহাকেও দেখি নাই। মিষ্ট কথায় অতি সরলভাবে এমন শিক্ষা দিবার প্রণালী কেবল গিরীশবাবুতেই সম্ভব। কেবল তাঁহার কৃপায় নিরক্ষর, নির্বোধ, কান্ডজ্ঞানহীন আমিও অভিনেত্রী বলিয়া পরিগণিতা হইয়াছি।

১৮৯৩ সালে ২৮ শে জানুয়ারি ম্যাকবেথ মঞ্চস্থ হল। প্রায় সাত মাস ধরে রিহার্সালের ফলাফল সম্বন্ধে সকলেই উদগ্রীব। অমৃতবাজার পত্রিকায় এইদিন বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হল :

OPENING NIGHT

THE MINERVA THEATRE

6, BEADON STREET

Saturday, the 28th January at 9 P.M.

Shakespeare in Bengali

MACBETH

I have got the piece mounted by European Artists and Dressed it under European Supervision and 'make up' by Mr. J.Pimm. For particulars see play-bills.

Next day, Sunday at Candle light

MACHBETH

G.C.GHOSH

Manager.

'ম্যাকবেথ' নাটকের হ্যান্ডবিল প্রকাশিত হয়েছিল। সেটি ছিল নিম্নরূপ :

" মিনার্ভা থিয়েটার।৬নং বিডন ষ্ট্রীট, কলিকাতা।শনিবার, ১৬ই মাঘ ১২৯৯ সাল, রাত্রি ৯ ঘটিকা।"

তিনকড়ির কাছে এই বিপুল আয়োজন সমস্ত কিছুই নতুন। সুতরাং এই সুযোগকে তিনকড়ি হেলায় নষ্ট করতে চাননি। ইতিমধ্যে অর্ধেন্দুশেখর মিনার্ভার নতুন নাট্যশিক্ষকরূপে যোগ দিলেন। মঞ্চের সাফল্যলাভের অজস্র বিধিবিধান তিনকড়ি সযত্নে শিক্ষা করলেন তাঁর কাছ থেকে। মিনার্ভার সূচনা, "ম্যাকবেথ" নাটকের এমন আশ্চর্য সমারোহপূর্ণ মঞ্চায়ন, বাংলা নাটকের মঞ্চসজ্জা-রীতির প্রকরণ পরিবর্তন ও একটি নাটকের জন্য রঙ্গালয়মুখী জনতার আগ্রহ — সব কিছুই বাংলা নাট্যাভিনয়ের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। তিনকড়ি এই নতুন অধ্যায়ের সাক্ষী তথা মুখ্যভুমিকাভিনেত্রী।

৩০শে জানুয়ারি 'অমৃতবাজার পত্রিকায়' ম্যাকবেথের সমালোচনা প্রকাশ পেল। তাতে গিরীশচন্দ্র ও তিনকড়ির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছিল। অবিনাশচন্দ্র তাঁর "গিরীশচন্দ্র" গ্রন্থে ম্যাকবেথের অভিনয় প্রসঙ্গে বলেন :

সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য স্বর্গীয় তিনকড়ি দাসীর লেডী ম্যাকবেথের অভিনয়। বিলাতের বড়-বড় শিক্ষিতা অভিনেত্রী যে ভুমিকা অভিনয় করতে ভীতা হন, সেই ভূমিকায় এক নগণ্যা অশিক্ষিতা বাঙ্গালী স্ত্রীলোকের দ্বারা অভিনয় যে একেবারেই অসম্ভব, ইহাই শিক্ষিত সমাজের ধারনা ছিল, কিন্তু তিনকড়ি তাহার অসামান্য অধ্যবসায় এবং গিরীশচন্দ্রের অদ্ভুত শিক্ষা-প্রভাবে তাঁহাদের সেই ভ্রান্ত ধারনা দুর করেছিলেন।

ম্যাকবেথের অভিনয় করেই তিনকড়ি বঙ্গনাট্য সমাজে এক আশ্চর্য বিস্ময় সৃষ্টি করলেন।শিক্ষিত সমাজে এই নাটক বহুল প্রশংসা পেলেও সাধারন জনগনের মধ্যে তা সফলতা পায়নি।আর্থিক ব্যর্থতার ফলে গিরীশচন্দ্র মাত্র এক সপ্তাহ পরেই 'মুকুল-মুঞ্জরা'র ন্যায় আদিরসাত্মক নাটকের মঞ্চায়ন করতে বাধ্য হন। ম্যাকবেথ জনপ্রিয় না হলেও মুকুল-মঞ্জুর বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করল। সংবাদপত্রের পাতা প্রশংসায় উচ্ছসিত হয়ে উঠল। দুই শ্রেণীর দর্শককে সন্তুষ্ট করার জন্য ম্যাকবেথ ও মুকুল-মঞ্জুর দুটিই এক সাথে মঞ্চস্থ হতে লাগল।

এরপর তিনকড়ি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন থিয়েটারের সাথে যুক্ত হয়েছেন। অভিনয় করেছেন বহু নাটকে। বেশিরভাগই উচ্চ প্রশংসিত, কিছু ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা কম। কিন্তু তাতে তিনকড়ির সুখ্যাতিতে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। গিরীশচন্দ্রকে গুরু হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন, তাই শেষ জীবন অবধি গিরিশচন্দ্রকে অনুসরণ করে চলেছেন। গিরিশচন্দ্র যেখানে তিনকড়ি সেখানে। অবিচ্ছেদ্য এক গুরু-শিষ্যা কাহিনী।

তিনকড়ি অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল —

আবু হোসেন এ 'দাই' এর চরিত্র, জনাতে 'জনা', বিসর্জনে 'বিরজা', পঞ্চরং -এ 'গুলজার',পান্ডবের অজ্ঞাতবাসে 'দ্রৌপদী', স্বপ্নের ফুলে 'মনহরা', সভ্যতার পান্ডাতে 'সভ্যতা', ফনির মনিতে 'শিখা', পাঁচ কনেতে 'সত্য ও বিপিনকুমারী', পাণ্ডব-গৌরবে 'সুভদ্রা",সীতার বনবাসে 'সীতা',বিল্বমঙ্গলে 'পাগলিনী',অভিমন্যু বধে 'অভিমন্যু', চাঁদবিবিতে 'যোশীবাঈ', ছত্রপতি শিবাজীতে 'জিজিবাঈ', মীরাবাঈতে 'মীরা', সিরাজদৌল্লাতে 'ঘসেটি বেগম' প্রভৃতি।

১৯০২ সালের ১৯শে জুলাই ক্লাসিক থিয়েটারে "ভ্রান্তি" নাটকে অন্নদা চরিত্রে অভিনয় করেন তিনকড়ি। সুযশ অর্জন করেছিলেন এই অভিনয়ে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারনে মঞ্চ থেকে সরে দাঁড়ালেন।ডাক্তারের পরামর্শে থিয়েটার ছেড়ে বাড়িতে বসে রইলেন বেশ কিছুদিন। রাত্রি জাগরণ তাঁর পক্ষে মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু থিয়েটারের নেশা যার রক্তে সে কেমন করে বেশিদিন থিয়েটারের বাইরে থাকতে পারে। গিরিশচন্দ্র মিনার্ভার দায়িত্ব নিলেন সেই সময়। তিনকড়িকে আহ্বান জানালেন যোগদানের জন্য। থিয়েটারের নেশা ও গিরীশবাবুর ডাক উপেক্ষা করতে পারলেন না তিনকড়ি। যোগ দিলেন মিনার্ভাতে।কিন্তু বেশিদিন অভিনয় করতে পারলেন না। বহুমুত্র রোগে আক্রান্ত তিনকড়ির শরীর রাত্রি জাগরণের ধকল বইতে পারল না। ডাক্তারের নির্দেশে থিয়েটার ছেড়ে কাশীধামে গেলেন হাওয়া বদলের উদ্দেশ্যে।কিছুদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্যের উন্নতি হল। ডাক্তার বললেন খুব সাবধানে থাকলে এক বছরের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু কাশীতে ভাল লাগল না থাকতে। ফিরে এলেন কলকাতায়।ফিরেই মিনার্ভাতে গিরিশচন্দ্রের নতুন নাটক তপবলে ছোট্ট একটি চরিত্র 'বদরি'র ভূমিকায় অভিনয় করলেন।এটিই তিনকড়ির গিরিশ-নাটকে শেষ ভুমিকা গ্রহণ।

১৯১২ সালের ২৮শে জানুয়ারির পর তিনকড়ির পেশাদারি মঞ্চের অভিনয়-জীবন প্রায় শেষ হল। ৯ই ফেব্রুয়ারি গিরিশচন্দ্র মারা যান ।তিনকড়িও পেশাদারী অভিনেত্রী জীবনের বন্ধন ছিন্ন করেন। কোনো থিয়েটারের সঙ্গেই আর সম্পর্ক রইল না তিনকড়ির। কোন এক নিবিড় বন্ধনে যেন গিরিশচন্দ্র বেঁধেছিলেন তিনকড়িকে। সে বন্ধন ছিন্ন হওয়ার সাথে সাথেই মঞ্চের প্রতি এক ঔদাসিন্য গ্রাস করল তাঁকে।এর কিছুদিন পরে তাঁর বাহুতে একটি কারবাংকল স্ফোটক দেখা দেয়। একে বহুমূত্র তারওপর স্ফোটক। মৃত্যু পরোয়ানারই নামান্তর সে যুগে। মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা অপারেশন করলেন। যন্ত্রণার উপশম হল। দু-তিনদিন একটু সুস্থও রইলেন। কিন্তু তারপর সেপ্টিসেমিয়ায় আক্রান্ত হলেন। বিষ সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ল । সমস্ত চিকিৎসাই ব্যার্থ হল।দুদিন অসহ্য যন্ত্রণার তীব্র জ্বালা সহ্য করে তৃতীয় দিনে বঙ্গ-রঙ্গালয়ের অপ্রতিম অভিনেত্রী — শ্রীমতি তিনকড়ি দাসী সমস্ত ভবযন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে রাত্রিবেলা পরলোকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। গভীর রাতে নিমতলার শ্মশানঘাটে থিয়েটারের সমগ্র কলা-কুশলীবৃন্দের উপস্থিতিতে শেষকৃত সম্পন্ন হল।

তিনকড়ি দাসীর ব্যক্তিগত জীবন দিয়ে শুরু করেছিলাম লেখা। তারপর তাঁর ব্যাক্তিগত জীবন অনুক্তই রয়ে গেছে। একটু বলার হয়ত দরকার আছে। তাতে তিনি কিপ্রকার মানুষ ছিলেন তার কিছুটা ধারনা পাওয়া যাবে। "মীরাবাঈ" তে অভিনয়ের সময়েই প্রলোভন এসেছিল —— বিরাট প্রলোভন। যদি থিয়েটার ছাড়ার সম্ভাবনা না থাকত তাহলে হয়ত ভেসেই যেতেন সেই প্রলোভনে। কিন্তু থিয়েটারকে ভালোবাসার ফলেই সেই লোভকে অনায়াসে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। মায়ের সাথে, নিজের মনের সাথে দ্বন্দ্ব করেও শেষ অবধি আর্থিক কারনে বারবনিতাজীবনের কদর্যতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। জীবনে "বাবু" এসেছেন, তাঁকে স্বামীর মর্যাদাই দিয়েছিলেন। তাঁর লালসা অত্যাচারও সহ্য করতে হয়েছিল। তবু তাঁকে উপেক্ষা করতে পারেন নি। হয়তো ভারতীয় নারীর সহজাত স্বভাব দায়ী তার জন্য। সাধারন এয়োতি নারীর মতই 'বাবু'র কল্যান কামনা করেছেন। তাই "করমেতিবাঈ" অভিনয় করার সময় দর্শকাসনে 'বাবু'র উপস্থিতিতে বিধবার বেশে মঞ্চে যেতে অস্বীকর করেছিলেন। সবার উপহাসের পাত্রী হয়েও মত বদল করেন নি। এই ঘটনা থেকে তিনকড়ির ভেতরের এক নারীকে চিনে নেওয়া যায়, যার কাছে এই অতি তুচ্ছ আচারও অসামান্য হয়ে ওঠে।

সেই যুগে অনেকেই জানতেন তিনকড়ির জীবনের আর একটি গোপন ও গভীর ভালবাসার কথা। সেই মানুষটি আর কেউ নন স্বয়ং নটগুরু গিরিশচন্দ্র। এই নিয়ে সে যুগে কম আলোচনা হয়নি। তাঁকে লুঠ করার ও গিরিশচন্দ্রকে খুনের চেষ্টাও করা হয়েছিল।

তিনকড়ির দানের কাহিনিও সেই যুগে বহুল প্রচলিত ছিল। বাল্যকাল থেকেই নিজের মুখের অন্ন দুঃখীদের দান করে দেওয়ার বহু ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। তারই প্রতিফলন দেখা যায় তাঁর উইলে। সেই উইল দেখে সত্যিই আশ্চর্য হতে হয় যে এটি কোনও বারাঙ্গনার শেষ ইচ্ছা।উইল অনুযায়ী তিনকড়ি তাঁর দুটি বাড়ি দান করেছিলেন বড়বাজার হাসপাতালকে, একটি বাড়ি দিয়ে যান তাঁর বাবুর ছেলেকে। অলঙ্কারাদি বিক্রয়ের টাকা এক দরিদ্রা প্রতিবেশিনীকে ও ভাড়াটেদের প্রত্যেককে সাহায্য হিসাবে। এবং যৎসামান্য নিজের শ্রাদ্ধশান্তির জন্য।

তিনকড়ি দাসীর জীবনীকাররা বলেন তিনি এক অনন্য সুদৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারিনী ছিলেন। তিনি যে ধরণের চরিত্রে অভিনয় কর‌তেন তার বেশিরভাগই ছিল শিক্ষিত সম্প্রদায়ের বোধগম্য। নিজের ব্যাক্তিত্বেও তিনি সেই আভিজাত্য ও গাম্ভীর্য আরোপ করে রেখেছিলেন। বিনোদিনীর সাথে তুলনা করার সময় তার সুমধুর গানের গলা ও এই বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্টটির উল্লেখ করা হয়। এই কারণেই সম্ভবত তিনি সাধারন জনগনের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন। নিজেকে "এলিট" শ্রেণীর যোগ্য করে তুলেছিলেন তিনি। তাই হয়ত একটি বিশেষ শ্রেণীর মধ্যেই আবদ্ধ থেকে গেছে তাঁর খ্যাতি। যে সুবিশাল নাম বিনোদিনী পেয়েছিলেন তাঁর সমান বা কিছুক্ষেত্রে তাঁর থেকে বেশী প্রতিভার পরিচয় দিয়েও তিনকড়ি ততধিক জনপ্রিয়তা পান নি।

তিনকড়ি বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর অম্লান প্রতিভার স্মৃতি বঙ্গ-রঙ্গালয় থেকে মুছে যায়নি। যাবেও না। কারন যে কীর্তি অমরত্ব দেয় তিনকড়ি সেই কীর্তি স্থাপন করতে পেরেছিলেন।

ভালো থাকুন।পড়তে থাকুন। 🍀


তথ্যসুত্রঃ 

অমিত মৈত্র লিখিত "রঙ্গালয়ে বঙ্গনটী" 

 এই লেখাটি আমি আমার  QOURA প্রোফাইলে কিছুদিন আগে লিখেছিলাম। এখানে সেটাই লিখলাম।কারণ তিনকড়ি দাসীকে নিয়ে বিশেষ লেখা পাওয়া যায় না। সবাইকে জানানোর জন্য এখানে লেখাটা দিলাম।   



0 Comments

আপনার বক্তব্য